মঙ্গলবার, ৭ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

থ্যালাসেমিয়া

থ্যালাসেমিয়া রোগী আর বাহক কিন্তু এক নয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:০৫ অপরাহ্ন, ২৯শে মে ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। যেখানে রক্তকণিকা দ্রুত ভেঙে যাওয়ার কারণে রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) দেখা দেয়। এই রোগে রক্তে অক্সিজেন বহনকারী হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন চেইনে জটিলতা দেখা দেয়। বাবা এবং মা দুজনই থ্যালাসেমিয়ার বাহক (ক্যারিয়ার) হলেই কেবল সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হিসেবে জন্ম নিতে পারে। বাবা বা মা যেকোনো একজন বাহক হলে সন্তানের বাহক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অর্থাৎ থ্যালাসেমিয়া রোগী আর বাহক কিন্তু এক নয়।

লক্ষণ

জন্মের চার-ছয় মাস পর থেকে থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। যেমন শিশুর ফ্যাকাশে হওয়া, দুর্বলতা, ঘন ঘন সংক্রমণ, জন্ডিস, শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, প্লীহা ও লিভার আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাওয়া, বয়ঃসন্ধির লক্ষণসমূহ প্রকাশিত না হওয়া ইত্যাদি।

থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা জটিল

১. অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ও জিনথেরাপি: অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ও জিনথেরাপি আমাদের দেশে এখনো প্রচলিত হয়নি।

২. নিয়মিত রক্তকণিকা (আরসিসি) দেওয়া ও আয়রন চিলেশন: নিয়মিত নিরাপদ রক্ত নিলে এবং সঠিকভাবে আয়রন চিলেশন করলে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগী অন্য ১০ জনের মতোই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। তাদের আরও কিছু ওষুধ যেমন ফলিক অ্যাসিড, আয়রন নিষ্কাশনের জন্য ভিটামিন সি, প্যারাথাইরয়েড ফেইলিউরের জন্য ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম, এন্ডোক্রাইন রিপ্লেসমেন্টস নিয়মিত দরকার হবে।

প্রতি মাসে রক্ত নেওয়া, প্রয়োজনীয় ওষুধসহ একজন রোগীর চিকিৎসা খাতে খরচ হয় ৫-১৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশের বেশির ভাগ থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্যই যা ব্যয়বহুল।

আরো পড়ুন : কিডনিতে পাথর কেন জমে, কী করবেন?

রোগীর খাবার

বাহকের আয়রন–জাতীয় খাবারে কোনো নিষেধ নেই। তবে থ্যালাসেমিয়া রোগী যিনি নিয়মিত রক্ত নিয়ে থাকেন, তাঁকে আয়রনযুক্ত খাবার খেতে বারণ করা হয়। লিকার চা খেতে বলা হয়।

রক্ত পরিসঞ্চালন

* পরিকল্পিত রক্ত পরিসঞ্চালন একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে সক্ষম করে তোলে।

* হাইপারট্রোফাইড ম্যারো–জনিত সমস্যা ও কার্ডিয়াক ফেইলিউরের প্রবণতা কমিয়ে রোগীদেরকে দীর্ঘায়ু করতে সহায়তা করে।

* পরিমিত রক্ত পরিসঞ্চালনা অস্বাভাবিক রক্ত তৈরির প্রক্রিয়াকে কমিয়ে দেয়।

* যতটুকু দরকার, ঠিক ততটুকু রক্ত দেওয়া উচিত; যাতে করে আয়রন ওভারলোড কম হয়।

* স্বল্প পরিমাণ, অল্প বিরতির রক্ত পরিসঞ্চালনা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। সাধারণত ২-৪ সপ্তাহ পরপর ১ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়।

* রক্ত পরিসঞ্চালনার জন্য কতটুকু রক্ত লাগবে, তা রোগীর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, ওজন, শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসক রোগীর জন্য কী পরিমাণ হিমোগ্লোবিন রাখতে চাচ্ছেন—ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে।

ব্যবস্থাপনা

* নিয়মিত রক্তদাতার রক্ত ব্যবহার করতে হবে। কারণ আপনজনের রক্ত ব্যবহার করলে গ্রাফট ভার্সেস হোস্ট ডিজিজের (জিভিএইচডি) মতো মারাত্মক রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়।

* রক্তের ওপর নির্ভরশীল থ্যালাসেমিয়া রোগীকে প্রথমেই বেইজ লাইন হিমোগ্লোবিনের মাত্রা জেনে নিতে হবে।

* রোগীর এবিও, আর এইচ-এর জেনোটাইপ, ফেনোটাইপ জেনে নেওয়া উচিত।

* সম্ভব হলে কেল, কিড ও ডাফি অ্যান্টিবডি জেনে নিতে হবে।

* ইলেকট্রোফোরিসেস পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার টাইপ, থ্যালাসেমিয়া মেজর/ ই-বিটা থ্যালাসেমিয়া জেনে নিতে হবে।

* ব্লাড এনহেনসিং ড্রাগ কারও কারও ক্ষেত্রে কার্যকর হয়। ফলে তাদের কম রক্তের দরকার হয়। এদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

* রেড সেল কনসেনট্রেট (আরসিসি) ব্যবহার করতে হবে। কারণ হোল ব্লাড ব্যবহার করলে শরীরে ফ্লুইডের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে কার্ডিয়াক ফেইলিউরের কারণ হতে পারে।

* রক্ত পরিসঞ্চালনার জন্য জ্বর হলে পরবর্তীতে লিউকেসাইট ফিল্টার ব্যবহার করতে হবে।

এস/ আই.কে.জে/

স্বাস্থ্য পরামর্শ থ্যালাসেমিয়া থ্যালাসেমিয়া রোগী থ্যালাসেমিয়া বাহক বংশগত রোগ থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250